মূলভাব :স্রষ্টার সৃষ্ট জীবকে ভালোবাসলেই স্রষ্টার সেবা করা হয়। স্রষ্টাকে পাওয়ার উত্তম পথ হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। তাই তাঁকে খুশি করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকুলকে খুশি করতে হবে।
ভাব সম্প্রসারণ : শুধু ঈশ্বরের প্রার্থনা করলেই তাঁকে পাওয়া যায় না বা নির্জনে বসে আল্লাহর ধ্যানে মত্ত থাকলেও ধর্ম পালন করা হয় না। তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি সদয় হলেই তাঁকে ভালোবাসা হয়। কোনো মানুষ যদি ঈশ্বরকে পেতে চায় তবে ঈশ্বরের সৃষ্টি অন্য জীবকুলের প্রতি তাকে দয়া প্রদর্শন করতে হবে। সকল ধর্মেই সৃষ্টকুলকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। কোনো ধর্মেই বলা হয়নি যে, মানুষ মানুষকে বা অন্য কোনো প্রাণীকে ঘৃণা করবে। তাই সকল জীবকে ভালোবাসার মাধ্যমেই আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারি। পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও বলা হয়েছে যে, তোমরা যদি আমাকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার সৃষ্টিকুলকে ভালোবাস। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সৃষ্টিকুলকে ভালোবাসার মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। পবিত্র বৌদ্ধধর্মে বলা হয় ‘পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক।' মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে জন্মগ্রহণ করেও যদি অন্য প্রাণীর প্রতি যত্নবান না হওয়া যায় তবে মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। মনুষ্যত্ব মানুষকে দান করে দ্যুতি। যার আলোয় মানুষ পথ চলতে পারে। পৃথিবীতে অসংখ্য দীন-দরিদ্র মানুষ ও ঐশ্বর্যশালী মানুষের সাহায্য ও ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। আর এসব দুস্থ, কাঙাল, অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখালে স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। শুধু আর্তমানবকে নয়; পশুপাখির মতো মূক ও অসহায় প্রাণীকেও ভালোবাসতে হয়। আজকের পৃথিবীতে যে নৈরাজ্য তার মূলে রয়েছে জীবের প্রতি জীবের ভালোবাসার অভাব। আর তাই আমরা যদি মানুষের প্রতি মানুষ, জীবের প্রতি জীব, প্রাণীর প্রতি প্রাণী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই তবেই পৃথিবী হবে সুন্দর, সুশৃঙ্খল।
মন্তব্য : স্রষ্টাকে পাওয়ার উত্তম পথ হচ্ছে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা। যদি তার সৃষ্টিকে ভালোবাসা যায় তবেই হবে ঈশ্বরকে ভালোবাসা, তবেই জীবন হবে অর্থপূর্ণ।