ক্রীতদাসের হাসি' (১৯৬২) শওকত ওসমানের প্রতীকধর্মী উপন্যাস। এটি শওকত ওসমানের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে স্বীকৃত। উপন্যাসটিতে প্রতীকাশ্রয়ে তৎকালীন পাকিস্তানিদের বিরূপ শাসনের সমালােচনা করা হয়েছে।
বাগদাদের বাদশা হারুন অর রশিদ অত্যাচারী। সে ক্রীতদাস তাতারী ও বাদি মেহেরজানের প্রণয়ে বাধা সৃষ্টি এবং তাতারীকে গৃহবন্দি ও অত্যাচার করে। তাতারী আমৃত্যু বাদশা হারুনের নির্যাতনের প্রতিবাদ করে যায়।
সামরিক এক নায়ক আইয়ুব খানের সঙ্গে হারুন-এর এবং বাঙালির সঙ্গে তাতারীর প্রতীকী মিল খুঁজেছেন। তাতারী যেমন স্বাধীন হয়েও খলিফার স্বৈরশাসনের বাইরে যেতে পারেনি, তেমনি পূর্ব পাকিস্তান পেয়েছিল নামেমাত্র স্বাধীনতা। খলিফার মতাে আইয়ুবও বাঙালির অর্থনৈতিক স্বাধিকার, স্বাধীনতা খর্ব করে তাদের সন্তুষ্টি পেতে চেয়েছিল। খলিফার মতাে আইয়ুবের চেষ্টাও নিষ্ফল।
মেহেরজান- এর মতাে বাংলা ভূমিও হাত-বদল হয়েছে- শক-হুন-পাঠান-মােগল-ব্রিটিশ-পাকিস্তান। দাসের প্রেমের মতােই মাতৃভূমির উপর আমাদের প্রেম যুগ-যুগান্তরের সামন্ত ভােগ-লিপ্সার নায়ক খলিফা হারুন তার একজন ক্রীতদাস তাতারীকে প্রিয়জন বিচ্ছিন্ন করে হাসাতে চেয়েছিল। তাতারীর প্রেমিকাকে খলিফা নিজের বেগমে পরিণত করে। খলিফা তাতারীকে রাজকীয় সুখ-সুবিধা প্রদান করে কেবল তাতারীর হাসি শােনার ইচ্ছে পােষণ করে। তাতারী হাসে না। অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে সে আরও স্থির হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত একটি প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তাতারীর মৃত্যু ও উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে।
তাতারীর হাসি উপন্যাসে বাঙালির স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস, গােলাম কেনা যায়, বান্দী কেনা যায়- ক্রীতদাসের হাসি কেনা যায় না’- নায়কের এ উক্তি উপন্যাসের সার কথা।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup