বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র। দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক বেনামীতে মুদ্রিত নীলদর্পণ’ (১৮৬০)। এদেশে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের চিত্র এতে অঙ্কিত হয়েছে। নাটকটিতে নাট্যকারের প্রত্যক্ষ স্বজাতি-প্রেম এবং বিদেশি শাসকের প্রজাপীড়নের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযােগ উত্থাপিত হয়েছে।
নাটকটির নাম ছিল নীলদর্পণম নাটকম’ এবং বিজ্ঞপ্তিটি ছিল : নীলকর-বিষধর- দংশনকাতর-প্রজা নিকর-ক্ষেমঙ্করেণ কেনাচৎ পথিকেনাভি প্রণীতম। নাটকে নাট্যকারের নাম ছিল না। ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারে এদেশে কৃষকজীবনের দুর্বিষহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানাের ক্ষেত্রে এই নাটকটির গুরুত্ব অপরিসীম।
নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক নাটক হিসেবে রচিত হলেও এর মধ্যে গ্রাম্যলােকের যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা তৎকালীন নাট্যসাহিত্যে ছিল একান্তই অভিনব। নাটকটির মধ্যে এদেশের শাসক ও শাসিতজনের সম্বন্ধ, অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশের অবস্থা, সভ্য মানুষের মধ্যে বর্বরতার পরিচয় প্রভৃতি দিকগুলাে সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছিল।
এই নাটকে উচ্চশ্রেণির চরিত্রগুলাের ভূমিকা যথেষ্ট সার্থকতা লাভ করতে পারে নি। পক্ষান্তরে সমাজের নিচুস্তরের চরিত্র সৃষ্টি যথেষ্ট সার্থক হয়েছে। এই নাটকে বিশেষ সময়ের কতকগুলাে অসহায় মানুষের ওপর নিপীড়নের মােটা রঙের চিত্রের অতিরিক্ত আর কিছু নেই। তবে এর গ্রাম্য ভূমিকাগুলাের মধ্যে মানবজীবনের যে খণ্ডিত রূপটুকুর পরিচয় মিলে তা সমসাময়িক নাটক থেকে নীলদর্পণ’কে বিশিষ্ট করেছে।
নাটকের বাস্তবতা এবং চরিত্রগুলির স্বাভাবিকতার গুণের জন্য অনেকেই নীল-দর্পণকে Uncle Tom's Cabin-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
উল্লেখযােগ্য চরিত্র গােলক বসু, নবীন মাধব, রাইচরণ, তােরাপ, সাবিত্রী, সরলতা, ক্ষেত্রমণি ইত্যাদি।
এ নাটক রচনার মাধ্যমে রাজদ্রোহের প্রকাশ দীনবন্ধু মিত্রের উদ্দেশ্য ছিল না। অসহায় প্রজাদের দুঃসহ লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষ চিত্র উদ্ঘাটন করে শাসকশ্রেণির করুণা উদ্রেক করাই ছিল নাট্যকারের উদ্দেশ্য।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup