বাংলা মহাকাব্যের ধারায় কায়কোবাদ অন্যতম কবি। মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাসের কাহিনি অবলম্বনে মহাশ্মশান’ (১৯০৫) নামে মহাকাব্য রচনা করে তিনি জাতীয় জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টির প্রয়াস পান। প্রকৃতপক্ষে জাতীয়তাবােধের কবি হিসেবেই বাঙালি মুসলমানদের কাছে তার শ্রদ্ধার আসন।
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মহারাষ্ট্রীয়দের পরাজয় এবং আহমদ শাহ আবদালীর বিজয় বর্ণনা কাব্যটির বিষয়বস্তু। সমগ্র কাব্যটি তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ড ২৯ সর্গ, দ্বিতীয় খণ্ড ২৪ সর্গ, তৃতীয় খণ্ড ৭ সর্গ বিশিষ্ট।
প্রধান চরিত্রগুলাে :ইব্রাহিম কার্দি, জোহরা বেগম, নজীবদ্দৌলা, দিলীপ, বশির খাঁ, রহিম শেখ, জরিনা বেগম, হিরণ বালা, আতা খাঁ, সুজাউদ্দৌলা, আহমদ শাহ্ আব্দালী। এই চরিত্রগুলাের মধ্যে ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক দুধরনেরই আছে।
চরিত্রসৃজনে হিরণ বালা শ্রেষ্ঠ। প্রেমিক আতা খাঁ নিজ পরিচয় গােপন অর্থাৎ প্রতারণার আশ্রয় নিলেও হিরণ বালা জোহরার মত ধর্মনিষ্ঠ থাকে নি। বরং আধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য মানবতাবােধের আলােকে সে বলেছে : ‘নিজে প্রেমময়/ জগদীশ, প্রেম শ্রেষ্ঠ সর্বধর্ম হতে/ হিন্দু মুসলমান করে সৃজেছে কি বিধি/ জীব শ্রেষ্ঠ মানবেরে-তােমারে আমারে? অথচ জোহরা প্রাণাধিক স্বামীর চেয়ে ধর্মকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ইব্রাহিম কার্দি বাহ্যিক কর্তব্যকর্ম করলেও স্ত্রীর প্রতি কর্তব্যকর্মে ব্যর্থ।
মহাশ্মশান’ কাব্যে মহাকাব্যিক কাহিনি, কাহিনির শাখা-প্রশাখা ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ মহাকাব্য বলা যায় না। অসংখ্য কাহিনি থাকলেও কাহিনি গ্রন্থ দুর্বল। এক কাহিনির সাথে অন্য কাহিনি বিচ্ছিন্ন। কাব্যের কাহিনির ধারাবাহিকতা নেই, নায়কোচিত চরিত্র নেই।
সর্বোপরি মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলাে এখানে সার্বিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। তবে ইতিহাস থেকে মহাশ্মশান কাব্যের বিষয়বস্তু নির্বাচনের মাধ্যমে কায়কোবাদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছেন।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup