বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ১২০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে অন্ধকার যুগ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই সময়ে বাংলা সাহিত্যের লিখিত কোনাে নিদর্শন পাওয়া যায় না। তবে কোনাে কোনাে সাহিত্যিকের মতে, এ সময় উল্লেখযােগ্য কোনাে সাহিত্য পাওয়া না গেলেও শূন্যপুরাণ’ সে সময় রচিত হয়েছিল। কিন্তু গ্রন্থটির লেখক কে তার সঠিক হদিস পাওয়া যায়নি। তবে যতটুকু জানা যায়, তাতে মনে হয় এটি রামাই পণ্ডিত রচিত ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ।
গ্রন্থটির রচনাকাল সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। পণ্ডিত যােগেনচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, শূন্যপুরাণ’-এর রচনাকাল ত্রয়ােদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে। সুকুমার সেন মনে করেন যে, ষােড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময় গ্রন্থটি রচিত।
গ্রন্থটি ৫১টি অধ্যায়ে বিভক্ত। গ্রন্থটির প্রথম ৫টি অধ্যায় সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধীয়। এই সকল সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণনায় মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাকি সব কয়টি অধ্যায়ই বিভিন্ন ও বিচিত্র রকমের ধর্মপূজার পদ্ধতি বিশ্লেষণে পূর্ণ। গ্রন্থটি নামবিহীন অবস্থায় পাওয়া যায়।
শূন্যপুরাণ গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণে রচিত একটি চম্পুকাব্য ! এর প্রথম পাঁচটি অধ্যায়ে সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে বর্ণনা আছে। এতে ধর্মদেবতা নিরঞ্জনের যে কল্পনা করা হয়েছে তা বৌদ্ধদের শূন্যবাদের অনুরূপ।
সেতাই, নীলাই, কংসাই, রামাই ও গােসাই এই পঞ্চপণ্ডিত পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের প্রচ্ছন্ন রূপ। গ্রন্থের পরের ৪৬টি অধ্যায়ে ধর্মপূজার রীতি-পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। দেবীর মনঞিঅধ্যায়ে হিন্দুদের অনুরূপ পশুবলির কথা আছে; কিন্তু বৌদ্ধধর্মে পশুবলি নিষিদ্ধ। শেষের দুটি অধ্যায়ে নাথদেবতার উল্লেখ আছে। এটিও প্রক্ষিপ্ত, কেননা নাথধর্ম ও ধর্মপূজা দুটি ভিন্ন ধর্ম। ধর্মপূজা পশ্চিমবঙ্গে এবং নাথধর্ম উত্তরবঙ্গে প্রচারিত হয়।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শূন্যপুরাণ’ শিল্পকর্ম হিসেবে নয়, ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেয়ে আসছে। বিশ্বকোষ’ প্রণেতা নগেন্দ্রনাথ বসু তিনটি পুঁথির পাঠ সংগ্রহ করে ১৩১৪ বঙ্গাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ‘শূন্যপুরাণ’ নামকরণ করে প্রকাশ করেন। এই কাব্যে শূন্যময় দেবতা’ ধর্মঠাকুরের পূজা পদ্ধতির বর্ণনা আছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup