বাংলা সাহিত্যে মাইকেলের একটি উল্লেখযােগ্য প্রহসন হলাে বুড় সালিকের ঘাড়ে রো’ (১৮৬০)। প্রথমে এ প্রহসনের নাম ছিল ভগ্ন শিবমন্দির।
এক লম্পট জমিদারের আচার-ব্যবহার ও দরিদ্র প্রজাদের দ্বারা উচিত শিক্ষা এই উপভােগ্য প্রহসনের মূলকাহিনি। এর গঠন ও বিষয়বস্তুর প্রভাব পরবর্তী বাংলা নাটকে খুবই স্পষ্ট। মধুসূদন দত্তের বুড় সালিকের ঘাড়ে রো’ প্রহসনটিতে সমকালীন বাংলার গ্রামীণ জীবনের একটি ব্যঙ্গাত্মক চিত্র আঁকবার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।
পল্লীসমাজের গভীর ক্ষতের ওপর আলােকপাতে লেখক সমর্থ হয়েছেন। জমিদারি প্রথার নিষ্ঠুর স্বার্থপরতা এবং প্রজাশােষণের পটভূমিতে প্রহসনের কাহিনি সৃষ্ট। এ প্রহসনে দেখা যায়, জমিদার ভক্তপ্রসাদ নিরুপায় নিরন্ন কৃষকের ওপর যারপরনাই নিষ্ঠুর আচরণ করে খাজনা আদায় করে। শুধু খাজনা আদায়ের বিষয়ে নয়, জমিদারের লাম্পট্যে গ্রামবাসী সর্বদা সন্ত্রস্ত থাকত। হানিফের স্ত্রী ফাতেমার মত বহু নারী তার ভােগের শিকার হয়েছে। তার ভােগের উচ্ছিষ্ট বহু কুলবালাকে বারাঙ্গনার জীবন বহন করতে হয়েছে।
নব্য ইংরেজি শিক্ষিতরা চিন্তার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সাধন করতে চাইল তা হিন্দুধর্ম ও জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষার নামে জমিদার বাধ সাধে এবং হিন্দু ধর্মের রক্ষক হিসেবে তার ব্যক্তিগত চরম উচ্ছখলতা, পাপাচার ও কামুকতার পরিচয় দেয়।
মূলত বুড় সালিকের ঘাড়ে রো’ সমাজ সমস্যার ভিত্তিতে জন্ম নিয়েছে, কিন্তু সামাজিক ব্যঙ্গ হয়ে উঠলেও এর সাহিত্যিক উস্কর্ষে কোথাও বাধা পায় নি। সমাজ সমস্যাকে আত্মসাৎ করে গল্প ও চরিত্র চলমানতা পেয়েছে।
প্রহসন হিসেবে এ রচনাকে বাস্তবতা প্রধান বলে অভিহিত করা যায়। প্রহসনের উল্লেখযােগ্য চরিত্র
হলাে ভক্তপ্ৰসাদ, পঞ্চানন বাচস্পতি, গদাধর, পুঁটি, ফাতেমা, ভগী, হানিফ গাজি প্রমুখ। এ প্রহসনে সামাজিক অসঙ্গতিকে চমক্কার ভাষাশৈলীর মাধ্যমে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup